ঈদ এলে মাংস তো খাওয়া হয়ই। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে। কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি ও ক্যালরি খেয়ে ফেলার ভয় তো আছেই। ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করা ও চর্বি নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য লাল মাংস (গরু, খাসি) বেশি খাওয়া বারণ।
মনে রাখবেন, লাল মাংস আমিষের সবচেয়ে উত্তম উৎস। একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দিনে ৫৫ গ্রাম এবং পূর্ণবয়স্ক নারীর দৈনিক ৪৫ গ্রাম পর্যন্ত আমিষ খাওয়া উচিত। কাজেই মাংসের সবটুকুই খারাপ নয়। খারাপ হলো এর চর্বি। চর্বি যথাসম্ভব ফেলে দিয়ে আমিষটুকু রেখে খেলে সবচেয়ে ভালো। দরকার খাওয়ার সময় মাত্রাজ্ঞান রাখা, যাতে ক্যালরি বেশি না হয়ে যায়।
আমরা যে পদ্ধতিতে মাংস রান্না করি, মানে তেল-মসলাসহকারে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি বা ভারতীয় মাংসের ভুনা বা ঝাল কারি, তাতে ক্যালরির পরিমাণ একটু বেশিই। এ রকম ছোট এক বাটি মাংসের ভুনা কারিতে (যাতে ১০০ গ্রাম বিফ বা গরুর মাংস থাকে) ক্যালরির পরিমাণ ৪৩৫, আর এর ৬৩ শতাংশই হলো চর্বি, ২৫ শতাংশ আমিষ।
১০০ গ্রাম গরুর মাংস যদি কাবাব করে খান, যাতে কিনা চর্বি সব ফেলে দেওয়া হয়েছে, তাতে ক্যালরির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬০, চর্বি ৭ শতাংশ এবং আমিষ ৯ দশমিক ৭ গ্রাম। এক সার্ভিং শামি কাবাবে আপনি পাবেন ৬৫ ক্যালরি, ৫৮ শতাংশ আমিষ, ৩৩ শতাংশ ফ্যাট।
১০০ গ্রাম পরিমাণ বিফ স্টেকে ১৫০ ক্যালরি, এতে ফ্যাট আছে ৪৪ শতাংশ আর আমিষ আছে ৫৬ শতাংশ। গরুর মাংসের তুলনায় খাসির মাংসে চর্বি বেশি। ১০০ গ্রাম খাসির মাংস ভুনা বা রান্না করা হলে তাতে ৪৯১ ক্যালরি খাওয়া হবে। তার মানে, মাংস তো আপনি খাবেন, কিন্তু পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনুন খাবারে।
* মাংস যতটা সম্ভব পাতলা করে কাটুন। পাতলা করে কাটা স্টেকে চর্বির পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। দৃশ্যমান সাদা চর্বির পুরোটাই চেঁছে ফেলে দিন।
* রান্নার সময় তেল-ঘি-মাখন যত কম ব্যবহার করা যায় তত ভালো। বরং সিরকা বা লেবুর রসে মেরিনেট করে, গ্রিল, কাবাব বা বেক করে রান্না করা ভালো। কাবাব ডুবো তেলে না ভেজে সামান্য তেল ব্রাশ করে ভেজে নিলে আরও ভালো।
* সবজি বা সালাদসহযোগে মাংস খান। যেমন বিফ সালাদ, বিফ ভেজিটেবল, বিফ শোয়ার্মা জাতীয় খাবারে মাংসের পরিমাণ কম খাওয়া হবে, তার জায়গা পূরণ করবে সবজি বা সালাদ।
* গরু বা খাসির একেক অংশে চর্বির পরিমাণ একক রকম। যেমন সবচেয়ে বেশি চর্বি আছে গরুর মগজে, দাপনা ও পাঁজরের মাংসে। সলিড অংশে চর্বি কম।
* উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হলে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয়। তাই অল্প আঁচে রান্না করা বা প্রেসার কুকারে রান্না করা ভালো।
* ক্যালরি মেপে খেতে হলে রসনাকে সংযত করতেই হবে। এক দিনেই অনেক মাংসের পদ রান্না করবেন না, খাবেনও না। এক বেলা মাংস খেলে অন্য বেলা সবজি, মাছ খাওয়া যায় কিনা দেখুন। একই সঙ্গে কাবাব, গ্রিল, বারবিকিউ, স্টেক, ভুনা মাংস, কলিজা—সব খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। একেক দিন একেক পদের স্বাদ নিন। মাংস যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে অনেক দিন পর্যন্ত তো খেতেই পারবেন।
ডা. তানজিনা হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল